
তীব্র যানজট রাজধানীতে
- আপলোড সময় : ১১-০৩-২০২৫ ১১:৪৪:০১ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১১-০৩-২০২৫ ১১:৪৪:০১ পূর্বাহ্ন


* নারী পোশাক শ্রমিক নিহতের ঘটনায় সড়ক অবরোধ
* বনানীর বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধে স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী
* চরম দুর্ভোগে পড়েন শিক্ষার্থী ও অফিসগামীসহ সাধারণ মানুষ
* হেঁটেই কর্মস্থল আর গন্তব্যের দিকে রওনা দেন অনেকেই
রাজধানীর বনানীতে নারী পোশাক শ্রমিক নিহতের ঘটনায় সড়ক অবরোধ করে তার সহকর্মীরা। এতে রাজধানীর বনানী, মহাখালী, গুলশান ও তার আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীর অন্য এলাকাতেও। রোজার মধ্যে তীব্র যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে রাজধানীবাসী। গতকাল সোমবার সকাল থেকে বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি সড়কের উভয়পাশ অবরোধ করে রাখে পোশাক শ্রমিকরা। তাদের অবরোধের কারণে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই যানজটের প্রভাব খিলগাঁও, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, মিরপুর, উত্তরা ও মগবাজারেও পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন শিক্ষার্থী, অফিসগামীসহ সাধারণ মানুষ। হেঁটেই কর্মস্থল আর গন্তব্যের দিকে রওনা দেন অনেকেই।
জানা গেছে, রাজধানীর বনানীতে গাড়ির ধাক্কায় ২ পোশাককর্মী নিহতের ঘটনায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তার সহকর্মীরা। গতকাল সোমবার সকালে বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। সড়ক অবরোধের ফলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, উত্তরা, মিরপুর, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, মগবাজার, গুলিস্তান, বাড্ডা, রামপুরা সড়কে তীব্র যানযট দেখা গেছে। পুরো হাতিরঝিল সড়ক প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। বিশেষ করে এফডিসি গেট থেকে গুলশানমুখী সড়ক ও মগবাজারমুখী সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। গতকাল সোমবার আবহাওয়া কিছুটা গরম থাকায় মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ সড়কে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় মানুষের চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ দেখা যায়। তাই বাধ্য হয়ে গাড়ি থেকে নেমে অনেকে হেটে গন্তব্যে যান।
তবে শ্রমিকদের দাবি, দোষী চালকের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তবে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়। গতকাল সোমবার সকাল থেকে প্রায় সাত ঘণ্টা অবরোধের পর দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর বনানীতে চেয়ারম্যানবাড়ি সড়কের অবরোধ তুলে নিয়েছেন পোশাক শ্রমিকরা। এর আগে ভোর ৬টা ৪১ মিনিটের দিকে চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায় কলাবাহী একটি পিকআপের চাপায় মিনা আক্তার নামে এক নারী পোশাক শ্রমিকসহ ২ জন নিহত হন। এর পরপরই সেখানে সড়ক অবরোধ করেন নিহতের সহকর্মীরা। এতে তীব্র যানজট তৈরি হয়। এ সময় তারা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও বন্ধ করে দেন। এতে যানজট ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী যাত্রীরা। পরে দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশ অবরোধকারীদের বোঝাতে সক্ষম হন এবং পোশাক শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন। দুপুরের দিকে ওই এলাকায় বাড়ানো হয় পুলিশ সদস্যের সংখ্যা। রাস্তার ওপর তারা সারিবদ্ধভাবে ব্যারিকেড তৈরি করে দাঁড়ান। যাত্রীরা বলছেন, এমন দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত সমাধান দরকার। গতকাল দুপুরের পর থেকে গার্মেন্টস শ্রমিকরা নিহত শ্রমিকের মরদেহ নিয়ে বনানীতে মিছিল করেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন করাইল বস্তির লোকজনও।
মিরপুর কাজীপাড়া থেকে বনানীতে অফিসগামী ফাতেমা আক্তার বলেন, গতকাল সোমবার সকাল ৮টার সময় বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশে রওনা দিয়েছি। কিন্তু কিছুদূর এসেই দেখি রাস্তা বন্ধ। দুইপাশের যাত্রীরা ফুটপাত দিয়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন। ফুটপাতেও অনেক ভিড়। তাই সেখানেও হাঁটতে পারছে না মানুষ। আমি হেঁটেও এখনও অফিসে পৌঁছাতে পারিনি।
মেরুল বাড্ডা থেকে তেজগাঁও অফিসে যান রিয়াজ হোসাইন। তিনি বলেন, অন্যদিন অফিসে যেতে আমার ৩০ মিনিটের বেশি সময় লাগে না। কিন্তু আজ মেরুল বাড্ডা, লিংক রোড ধরে অফিসে পৌঁছাতে পুরো ২ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, অন্যদিন হাতিরঝিলে রাস্তা ফাঁকা থাকলেও সোমবার পয়েন্টে পয়েন্টে তীব্র যানজট, বাইক নিয়ে অফিসে পৌঁছাতে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে।
মগবাজার এলাকায় কথা হয় তানভীর কাদেরের সঙ্গে। তিনি বাড্ডার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তানভীর বলেন, শাহবাগ থেকে মগবাজার মোড়ে আসতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। সাধারণত কিছুটা জ্যাম থাকলেও ১৫-২০ মিনিট লাগে। সোমবার গাড়ির চাকা যেন ঘুরছিলোই না। আবার গরম পড়ে কিছুটা। রোজা রেখে যানযটে ক্লান্ত হয়ে যাই।
ফার্মগেট এলাকায় সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বনানী যাচ্ছিলাম। দেখছি গাড়ি চলছে না। পুরো রাস্তা যানযটে আটকে ছিলো। এখন বাসায় ফিরে যাচ্ছি। এই জ্যাম আজকে (সোমবার) শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে না। বনানীর ঐ দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে গার্মেন্টসকর্মীরা ইনকামিং এবং আউটগোয়িং উভয় দিকের রাস্তা বন্ধ করে দেন। এছাড়া গার্মেন্টসকর্মীরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন।
ট্রাফিক গুলশান বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে বনানী-কাকলী ক্রসিং এবং মহাখালীর আমতলীতে ডাইভারশন দিয়ে গুলশান-২ থেকে গুলশান-১ হয়ে আমতলী দিয়ে ইনকামিং এবং একইভাবে আউটগোয়িংয়ে চলাচল করা যাচ্ছে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ওঅ্যান্ডএম কোম্পানির ট্রাফিক সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের প্রধান হাসিব হাসান খান জানান, বনানী চেয়ারম্যানবাড়ির কাছে পোশাক শ্রমিকরা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে অপারেশন বন্ধ করে রেখেছেন। এর আগে, সকাল ছয়টার দিকে বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায় গাড়ির ধাক্কায় ২ পোশাক শ্রমিক নিহত হন। এ ঘটনায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তার সহকর্মীরা। নিহত একজনের নাম মিনারা আক্তার অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল সারোয়ার বলেন, সকাল থেকে গার্মেন্টস শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ রাখে। এতে রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। তাদেরকে বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। অবশেষে তাদের দাবি পূরণের আশ্বাসে তারা সড়ক ছেড়েছে। এছাড়া অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গুলশান ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মফিজুল ইসলাম জানান, বনানী এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কিছু গাড়ি ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে এবং কিছু গাড়ি রামপুরা ও প্রগতি সরণি দিয়ে ডাইভারশন করে পাঠানো হয়। এতে যানজট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বনানী থেকে শুরু হওয়া এই যানজট বিমানবন্দর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে সাত রাস্তা ও জাহাঙ্গীর গেট এলাকাও যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে। যানজটের কারণে অফিসগামী মানুষ থেকে শুরু করে সাধারণ যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হন।
মহাখালী ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. জুনাইদ বলেন, বনানীতে রাস্তা অবরোধের কারণে মহাখালীতে চাপ বাড়ছে, যানজট দীর্ঘ হচ্ছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ